হেরেম-সংস্কৃতি কি ইসলাম বিরোধী?

সুলতান সুলেমান সিরিয়াল দেখেছেন? একটা ব্যাপার কি কখনো খটকা লেগেছে—যে সুলতান এত ইসলামী আইন মান্য করছেন, ছদ্মবেশে বাজারে বাজারে গিয়ে কেউ ভেজালপণ্য দিচ্ছে কিনা, কেউ ওজনে কম দিচ্ছে কিনা তা তদারকি করছেন, সমকামিতার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছেন, সেই সুলতানই কিনা তাঁর হেরেমে বিবাহ-বহির্ভূত যৌনতায় লিপ্ত হচ্ছেন! বিষয়টি কি আপনার কাছে স্ববিরোধী মনে হয়?

আসলে বিষয়টি মোটেও স্ববিরোধী নয়। আপনি জানেন না বলেই আপনার কাছে স্ববিরোধী মনে হয়েছে। হেরেমসংস্কৃতি ইসলামী শাসনব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এমন কোনো ইসলামি শাসক পাবেন না যার কোনো হেরেম ছিল না। যিনি বহুগামী ছিলেন না। ইসলাম মেনেই এই যৌনপ্রমোদকেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন মধ্যযুগের সব ইসলামপ্রিয় বাদশাগণ। হেরেমে যাদের নিয়ে তারা ফুর্তি করতেন তাদের স্ট্যাটাস ছিল দাসী। দাসীর সাথে যেহেতু যৌনতা বৈধ তাই ইসলামি শরিয়া আদালতের কোনোরূপ নিষেধাজ্ঞা ছিল না এই কাজে। ইসলামে একসঙ্গে চারটি স্ত্রী রাখা বৈধ। কিন্তু দাসীর সংখ্যার কোনো সীমারেখা নেই। আপনি চাইলে শতশত দাসী উপভোগ করতে পারবেন এবং সেটা ইসলাম মেনেই।

‘ইসলামে চারটি পর্যন্ত বিয়ে করা যায়’—এটাও এক বিরাট মুমিঙ্করের ফাঁকি। আপনি চাইলে ১০, ১৫, ২০, ২৫… বিয়েও করতে পারবেন। শর্ত শুধু একসঙ্গে ৪ টির বেশি স্ত্রী রাখা যাবে না। তিনজনকে রেখে ১ জনকে তালাক দিয়ে নতুন ১ জনকে স্ত্রী হিসেবে যুক্ত করা যাবে। আবার ভোগ শেষ পুরোনো একজনকে তালাক দিয়ে নতুন কোনো রমণীকে বিয়ে করা যাবে। নবীর নাতি ইমাম হাসান অসংখ্য বিয়ে করেছেন এই প্রক্রিয়ায়। চারজন স্বাধীন নারী তাঁর স্ত্রী হিসাবে থাকতেন সব সময়ই। বহু স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন তিনি। সর্বমোট ৭০ জন মহিলাকে বিবাহ করেছিলেন হজরত ইমাম হাসান। এমনও দিন যেত যে একদিনে দুইজন স্ত্রীকে তালাক দিতেন তিনি। তাঁর পিতা হজরত আলী (রা) কুফার লোকদের বলতেন, “তোমরা মহিলাদেরকে হাসানের নিকট বিবাহ দিও না। কারণ সে একজন অতিশয় তালাক প্রদানকারী পুরুষ।” স্ত্রী ছাড়াও ‘বেহেশতী যুবকদের সর্দার’ ইমাম হাসানের শতশত যৌনদাসী ছিল।

তথ্যসূত্র: ইবনে কাছীর প্রণীত কিতাব আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া ৮ম খন্ড ৮২ পৃষ্ঠা।

নতুন স্ত্রী গ্রহণের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী স্ত্রীদের অনুমতি নেয়ার বাধ্যবাধকতা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় তাগুদআইনে থাকলেও কুরআন হাদিস ভিত্তিক ইসলামি আইনে নেই। মধ্যযুগের মুসলিম রাজা-বাদশার কাছে ইসলামের এত জনপ্রিয়তার অন্যতম মনস্তাত্ত্বিক কারণ হলো ইসলামের শরিয়া আইন তাদের যৌন ভোগবিলাসিতায় কোনো প্রকার বাধা তো দূরে থাক, নৈতিক সমর্থন যুগিয়ে গিয়েছে চিরকাল।

  • Abdullah Al Tarek

    Humanist writer.

    Related Posts

    শান্তি বনাম খিলাফত ও ইসলামি শরিয়া

    ইসলামি শরীয়া কখনো শান্তি আনতে পারেনি এবং পারবেও না। যেখানে খোলাফায়ে রাশেদীন এবং বড় বড় সাহাবীরা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি, উল্টো মারামারি, হানাহানি, গুটিবাজি নিজেদের মধ্যে বিভক্তির মাধ্যমে স্থায়ী শত্রুতা, নিজেরা নিজেদের হত্যা এমনকি একপার্টির ক্ষমতা শেষে ভিন্নপার্টিকতৃক তাদের কবর থেকে লাশ উঠিয়ে আগুন দেয়া, ক্বাবা ঘরে হামলা, শিয়া- সুন্নী – খারেজি বিভক্তি আরো কত কি! সেখানে এরা এযুগের কত বড় মুসলিম হলো যে ইসলামি শরীয়া দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা…

    Read more

    আইয়্যামে জাহেলিয়ার নামে মিথ্যাচারের জবাব :

    ইসলামকে গ্লোরিফাই করার জন্য মুসলিমরা যেই মিথ্যাচারগুলো করে থাকে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আইয়্যামে জাহেলিয়া।  তারা এটাকে নিয়ে এমনভাবে অপপ্রচার  চালায় যেন মনে হয় ইসলাম আসার পূর্বে বুঝি আরবে, এমনকি পৃথিবীতে জ্ঞান বিজ্ঞান বা সভ্যতা বলতে বুঝি ছিলো না। এটা নিয়ে সাধারণত যে ৪ ধরনের অপপ্রচার হয় তা হলো : ১. ইসলামের পূর্বে পুরো পৃথিবী আইয়ামে জাহেলিয়া ছিলো  ২. ইসলামের পূর্বে সমগ্র  আরবে আইয়ামে জাহেলিয়া ছিলো ৩. ইসলামের পূর্বে …

    Read more

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Latest

    আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কি হিন্দু শাক্তদেবী মা-কালীকে উদ্দেশ্য করে লেখা?

    আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কি হিন্দু শাক্তদেবী মা-কালীকে উদ্দেশ্য করে লেখা?

    একেই কি বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

    একেই কি বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

    কর্ণচিকিৎসা

    কর্ণচিকিৎসা

    তাকদীর বিষয়ক রেফারেন্স

    তাকদীর বিষয়ক রেফারেন্স
    কুদরত

    পরকাল নিয়ে মুমিনদের বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্নের জবাব

    পরকাল নিয়ে মুমিনদের বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্নের জবাব