স্বঘোষিত নবী মুহাম্মদের যৌনজীবনের সাফল্য ও ব্যার্থতা সম্পর্কে জানাটা ভীষণ কৌতূহলের। যে কোনো বিষয়েই হোক না কেনো মানুষের কৌতূহল যতো বেশী প্রলম্বিত হয় সে বিষয়টি সম্পর্কে জানার কৌতূহলের মাত্রাও ততো বাড়ে ।মুহাম্মদ নিজেকে তথাকথিত আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ বলে দাবি করেছিলেন এবং অনেকগুলি বিয়েও করেছিলেন যার নজির খুব কমই আছে । তাই এ বিষয়টি আলোচিত হওয়ার দাবি রাখে । শুধু মানুষের কৌতূহল নিরসনের জন্যেই নয়, নারীর প্রতি মুহাম্মদের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গী কীরূপ ছিলো তা অবহিত হওয়ার জন্যেও তাঁর দাম্পত্যজীবনের উপর আলোকপাত করা আবশ্যক এবং বিশ্লেষন করার দাবি রাখে। কিন্তু সমস্যা হলো, মুহাম্মদের জীবনীকারগণ এ বিষয়টিতে কার্যতঃ নীরব, ফলতঃ এ বিষয়ে আলোচনা করা বা এর উপর আলোকপাত করার জন্যে আমাদের সম্পূর্ণই নির্ভর করতে হবে কোরান, হাদিস এবং কোরানের তফসিরের উপর । ইসলামের ইতিহাস থেকেও কিছু সূত্র পাওয়া সম্ভব ।এসব সূত্র প্রাপ্ত তথ্য ও ইঙ্গিতের সাহায্যে মুহাম্মদের যৌনজীবনের একটি বিশ্বাসযোগ্য ছবি অঙ্কন করা সম্ভব হবে।
সাধারণভাবে ভেড়ার রাখাল মুসলিমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করে যে মুহাম্মদের যৌনজীবনে ছিলো অপার সুখ, শান্তি এবং আনন্দে ভরপুর । কোনো প্রকার দুঃখ-কষ্ট, ঝগড়া-বিবাদ, ও অশান্তি ছিলো না তাঁর দাম্পত্যজীবনে । তাঁর স্ত্রীরা সবাই ছিলেন খুশী, সুখী ও আনন্দমুখর; তাঁদের পরষ্পরের মধ্যে সন্দেহ, অবিশ্বাস, বিদ্বেষ ও হিংসা ছিলো না; তাঁরা সবাই সবাইকে গভীরভাবে ভালবাসতেন, সকলেই মুহাম্মদকে হৃদয় উজার করে ভালবাসতেন; তাঁদের মুহাম্মদের প্রতি কারো কোনো প্রকার রাগ,দুঃখ, অভিযোগ ও অভিমান ছিলো না । অন্যদিকে মুহাম্মদও সকল স্ত্রীকে সর্বদা প্রাণঢালা ভালবাসা দিয়ে সকলকে আনন্দে মাতিয়ে রাখতেন, সকলকে সমানভাবে ভালবাসতেন ও সকলের প্রতি সমান নজর রাখতেন, তিনি নিজেও স্ত্রীদের আচার-ব্যবহারে, ভালোবাসায়, সেবা-যত্নে যার পর নাই খুশি ও তৃপ্ত ছিলেন; তাঁর অন্তরে স্ত্রীদের প্রতি তাঁরও কোনোরূপ রাগ, দুঃখ, অনুযোগ ও অভিযোগ তিলমাত্র ছিলো না । বলা বাহুল্য যে, মুসলিমরা এরূপ বিশ্বাস করে অন্ধভাবে যেখানে কোনো যুক্তি, বুদ্ধি ও প্রমাণের লেশ মাত্র নেই । অথচ তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই কেবল যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে ভাবলেই এটা সহজেই অনুমান করা যায় যে মুসলিমরা যা বিশ্বাস করে তা হওয়া অসম্ভব । মুহাম্মদের দাম্পত্যজীবন দুঃখ-কষ্ট, ঝগড়া-বিবাদ, অভিযোগ-অনুযোগ ছাড়াই সম্পূর্ণরূপেই সুখ, শান্তি ও আনন্দে ভরপুর ছিলো – এ রকম হওয়া মোটেই সম্ভবপর ছিলো না, কারণ তাঁর হারেমে ছিলেন একসঙ্গে সর্বনিম্ন ন’জন স্ত্রী।শিয়া সম্প্রদায়ের অনেকেই মনে করেন যে মুহাম্মদ যখন মারা যায় তখন পনেরো জন স্ত্রী জীবিত ছিলেন । যাঁর হারেমে ৯’জন থেকে ১৫ জন স্ত্রী থাকে তাঁর সংসারে ঝগড়া-বিবাদ, অভাব-অভিযোগ, হিংসা-বিদ্বেষ ও অশান্তি থাকবে না তা হতেই পারে না । এবং বস্তুতঃ, এটাই সত্যি ঘটনা যে, মুহাম্মদের যৌনজীবনেও ছিলো সুখ-দুঃখ, হর্ষ-বিষাদ, অভিযোগ-অভিমান, ঝগড়া-বিবাদ ও তীব্র অশান্তি । হ্যাঁ, কোরান, হাদিস ও মুহাম্মদের জীবনী থেকে পাওয়া তথ্য ও ইঙ্গিতগুলো সে সাক্ষ্যই বহন করে চলেছে।
কোরানের তফসির এবং হাদিস বলছে যে মুহাম্মদ তাঁর দু’জন স্ত্রীকে (সওদা ও হাফসাকে) তালাক দিয়েছিলেন এবং অন্যান্য স্ত্রীদের বারবার তালাকের ভয় দেখিয়েছিলেন । স্বামী-স্ত্রীর সাংসারিক জীবন যখন দুঃসহ হয়ে ওঠে তখন সেই দুঃসহ জীবনের অবসান হতে পারে কেবল তালাক বা পাকাপাকি বিচ্ছেদের মাধ্যমে । অর্থাৎ তালাক হলো একটা চরম পদক্ষেপ যা কেবল অশান্তির চরম মুহূর্তেই নেওয়া হয় । সুতরাং মুহাম্মদের এই তালাক দেওয়ার মতো চরম পদক্ষেপ নেওয়ার ঘটনা এবং তালাক প্রদানের ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা প্রমাণ করে যে মুহাম্মদের দাম্পত্যজীবনে চরম অশান্তি বিরাজ করতো । অবশ্য এ কথাও সত্যি যে সওদা ও হাফসাকে দেওয়া তালাক মুহাম্মদ পরে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন । মুহাম্মদ তাঁদের কেনো তালাক দিয়েছিলেন এবং কেনোই বা তালাক প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন তার কারণগুলি মোটেই অজানা নয়, এগুলি জানা যায় কোরানের তফসির ও হাদিস থেকে । এ বিষয় দু’টি এখানে আলোচনা করবো না, কেননা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি এই অধ্যায়েরই শেষে ‘হাফসাকে তালাক’ ((http://giasuddinonline.blogspot.in/2015/01/blog-post_17.html) এবং ‘সওদাকে তালাক’ (http://giasuddinonline.blogspot.in/2015/02/blog-post_20.html) শিরোনাম দিয়ে ।
প্রসঙ্গতঃ জানাতে চাই যে, যদিও মুহাম্মদের অনুরাগী জীবনীকারগণ তাঁর দাম্পত্যজীবনের অশান্তির ছবিটি আড়াল করার প্রাণান্তকর প্রয়াস করেছেন, কিন্তু তাঁদের সে প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে । মুহাম্মদের গুণগান করার প্রয়োজনেই কখনও কখনও নিজেদের অজান্তেই তাঁর দাম্পত্যজীবনের অনেক অপ্রীতিকর ঘটনার বর্ণনা তাঁরা করে ফেলেছেন । এসব বর্ণনা থেকে এ প্রমাণ পাওয়া যায় যে মুহাম্মদের স্ত্রীদের পরষ্পরের মধ্যে সদ্ভাবের ভীষণ অভাব ছিলো, তাঁরা অনেকেই একে অপরকে হিংসা করতেন, এবং এমনকি কারো কারো মধ্যে শ্ত্রুতার মনোভাবও বিদ্যমান ছিলো।
মুহাম্মদের স্ত্রীদের মধ্যে কীরূপ হিংসা, বিদ্বেষ ও মনোমালিন্য ছিলো তা বোঝার জন্যে কয়েকটা দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক । (১)“রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একদা হযরত সাফিয়ার (রাঃ) গৃহে গিয়ে দেখলেন, তিনি কাঁদছেন । কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন – আয়েশা এবং জয়নাব বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহর স্ত্রী এবং গৌরবের দিক হতে একই রক্তধারার অধিকারিণী । সুতরাং আমরাই শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার । রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তুমি কেন বললে না যে, আমি আল্লাহর নবী হযরত হারুণের বংশধর ও হযরত মুসার ভ্রাতুষ্পুত্রী এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমার স্বামী । অতএব তোমরা কোন দিক হতে আমার চাইতে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হতে পার ?” (দ্রঃ মহানবী (সঃ) এঁর বিবাহ, মহম্মদ সাদাত আলী, পৃ – ১১২)
(২). একদা কোনো এক সফরে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) – এর সাথে তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণও সফর সঙ্গী ছিলেন । প্রত্যেকের জন্যই ভিন্ন ভিন্ন উটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল । চলার পথে হঠাৎ সাফিয়ার (রাঃ) উট অসুস্থ হয়ে পড়ে । হযরত জয়নাবের (রাঃ) নিকট একটি অতিরিক্ত উট ছিল । রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জয়না বকে তাঁর অতিরিক্ত উটটি হযরত সাফিয়ার (রাঃ) সাহায্যের জন্য দিতে বললেন । জয়নাব বললেন – এই ইহুদী মেয়েকে আমি উট দেব না । জয়নাবের কথায় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) খুবই মর্মাহত ও অসন্তুষ্ট হলেন । ফলে দীর্ঘ দুই মাস জয়নাবের সাথে তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিলেন ।” (সূত্রঃ – ঐ, পৃ – ১১২) তিন). সাফিয়াকে সহ্য করতে পারতেন না মুহাম্মদের আর এক পত্নী হাফসাও – এ কথা হাদিস থেকেও পাওয়া যায় । এ প্রসঙ্গে মহম্মদ সাদাত আলী তাঁর ঐ গ্রন্থেই হাদিস তিরমিজী শরীফকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন – “একদা উম্মুল মু’মেনীন হযরত সাফিয়া (রাঃ) কাঁদছিলেন । রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলেন । তিনি উত্তরে বললেন,’আমাকে হাফসা বলেছে যে, আমি ইহুদীর মেয়ে ।’ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দিয়ে বললেন, ‘তুমি নবী বংশের মেয়ে । তোমার বংশে নবী আবির্ভূত হয়েছেন । বর্তমানে তুমি নবীর স্ত্রী । সুতরাং হাফসা তোমার উপর কোন বিষয়ে গর্ব করতে পারে ?’ (পৃ – ৫৭) চার). মারিয়াকে নিয়ে মুহাম্মদের সংসারে তীব্র কলহ হতো । মারিয়া ছিলেন একজন খৃস্টান দাসী যাঁকে মুহাম্মদ মিশরের সম্রাটের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন । মারিয়া ছিলেন অতীব সুন্দরী কম বয়সী বালিকা । মুহাম্মদ তাঁকে উপপত্নী করে রেখেছিলেন । মারিয়াকে কেন্দ্র করে মুহাম্মদের দাম্পত্যজীবন চরম বিষময় হয়ে উঠেছিলো ।
এর ইঙ্গিতও পাওয়া যায় মহম্মদ সাদাত আলীর উক্ত বইটিতে । তিনি লিখেছেন – “সম্রাটের উপহারকৃত দু’জন রমণী আপন বোন এবং দেখতে খুবই সুন্দরী ছিলেন । মহানবী (সাঃ) মারিয়াকে [বিবাহ পূর্বক] হযরত সাফিয়ার বাসস্থান সংলগ্ন অপর একটি বাসায় রাখলেন। মার্টিন লিংগস অপর এক বর্ণনায় মারিয়াকে ক্রীতদাসী (bondmaid) রূপে উল্লেখ করেছেন । কিন্তু তিনি তাও বলেছেন, মারিয়া যখন রাসূলের (সাঃ) সন্তানে গৌরবান্বিতা, তখন তিনিই হলেন সকল আলোচনা ও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ।” (পৃ – ১০৩) মুহাম্মদ তাঁর সকল স্ত্রীদের পৃথক পৃথক ঘর তৈরী করে দিয়েছিলেন তাঁর গৃহের সীমানার মধ্যেই । তাহলে সাফিয়া ও মারিয়াকে কেনো তাঁর গৃহ থেকে দূরে অন্যস্থানে ঘর দিয়েছিলেন ? কারণটি যে তীব্র দাম্পত্যকলহ তা সহজেই অনুমেয় । এই দাম্পত্যকলহের স্পষ্ট ইঙ্গিত কোরানেও পাওয়া যায় । সে কথা একটু পরে আলোচনা করবো । তাছাড়া মারিয়াকে কেন্দ্র করে দাম্পত্যকলহ কী ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছিলো তা বিস্তৃতভাবে ‘মুহাম্মদের হারেম সংবাদ’ অধ্যায়ে ও এই অধ্যায়ের শেষ দিকে আলোচনা করা হয়েছে । মুহাম্মদের স্ত্রীদের মধ্যে এই যে তীব্র কলহ হতো তা তো মোটেই অস্বাভাবিক ছিলো না । যার বহু পত্নী আছে তার পক্ষে সমস্ত স্ত্রীকে যেমন সমভাবে ভালোবাসা দেওয়া সম্ভব নয়, তেমনই সকল স্ত্রীর প্রতি সমভাবে খেয়াল রাখাও সম্ভব নয় এবং সকল স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা মেটানোও সম্ভব নয় । সুতরাং স্ত্রীদের মধ্যে অনিবার্যভাবেই পরষ্পরের প্রতি অবিশ্বাস, ঈর্ষা, ও বিদ্বেষ জন্মলাভ করে । মুহাম্মদও তাঁর স্ত্রীদের সকলের প্রতি ন্যায় বিচার ও সমান ব্যবহার করেন নি । এর ভুরি ভুরি প্রমাণ কোরানেই পাওয়া যায়। এরই ফলশ্রুতিতে তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে সদ্ভাবের পরিবর্তে মারাত্মক অসদ্ভাব এবং তীব্র হিংসা ও রেষারেষির জন্ম হয়েছিলো যা মুহাম্মদের দাম্পত্যজীবনকে দুঃসহ করে তুলেছিলো।
কোরানে বেশ কিছু আয়াত (তথাকথিত ঐশী বাণী বা আদেশ) আছে যেগুলি সম্পূর্ণই মুহম্মদের দাম্পত্যজীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট । সেই আয়াতগুলি থেকে তাঁর দাম্পত্য জীবনের নানা টানাপোড়েন, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার অনেক ইঙ্গিত ও সূত্র পাওয়া যায় । সেই ইঙ্গিত ও সূত্রগুলি কোন কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে কোরানের তফসিরে এবং হাদিসে । কোরানের তফসির মানে কোরানের আয়াতের উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট বাখ্যা করা । অনেক হাদিস ও তফসিরের বর্ণনায় মুহাম্মদের দাম্পত্যজীবন কেমন ছিলো তার ছবিটা স্পষ্টরূপে ফুটে উঠেছে । মুহাম্মদ যে তাঁর স্ত্রীদের তালাকের ভয় দেখাতেন এবং দু’জন স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পরে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন তার প্রমাণ রয়েছে কোরানের তফসিরে । তফসিরের বাখ্যা ও বরণনা থেকেই আমরা জানতে পারি যে মুহাম্মদের দাম্পত্যজীবন মোটেই সুখের বা আনন্দের ছিলো না, তিনি তাঁর স্ত্রীদের নিয়ে মোটেই খুশী ও সুখী ছিলেন না, এবং তাঁর স্ত্রীরাও মুহাম্মদের ব্যবহারে মোটেই তুষ্ট ও তৃপ্ত ছিলেন না । কোরানে অনেক আয়ই আছে যেগুলি মুহাম্মদের দাম্পত্যজীবনকে উন্মোচিত করে । তার মধ্যে কয়েকটি আয়াতের প্রতি এবার আলোকপাত করা যাক । সেই আয়াতগুলি হলো – “হে নবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীগণকে যাদের তুমি দেনমোহর দান করেছ, এবং বৈধ করেছি – তোমার অধিকারভুক্ত দাসীগণকে, যাদের আমি দান করেছি, এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি তোমার চাচাতো ভগ্নি ও ফুফাতো ভগ্নি, মামাতো ভগ্নি ও খালাতো ভগ্নি যারা তোমার সঙ্গে দেশ ত্যাগ করেছে, এবং কোনো বিশ্বাসী নারী নবীর নিকট নিবেদন করলে এবং নবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে – সেও বৈধ, এটা বিশেষ করে তোমার জন্য, অন্য বিশ্বাসীদের জন্য নয়, যাতে তোমার কোনো অসুবিধা না হয় ।” (৩৩/৫০) “তুমি ওদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তোমার নিকট থেকে দূরে রাখতে পারো এবং যাকে ইচ্ছা গ্রহণ করতে পারো, এবং তুমি যাকে দূরে রেখেছো তাকে কামনা করলে তোমার কোন অপরাধ নেই । এই বিধান এই জন্য যে, এতে ওদের তুষ্টি সহজতর হবে এবং ওরা দুঃখ পাবে না, এবং ওদের তুমি যা দেবে, তাতে ওরা প্রত্যেকেই খুশী থাকবে ।” (৩৩/৫১) “এর পর তোমার জন্যে কোন নারী বৈধ নয় এবং তোমার স্ত্রীদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণও বৈধ নয় যদিও তাদের সৌন্দর্য তোমাকে মোহিত করে, তবে তাদের অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে এ বিধান প্রযোজ্য নয় ।”
(৩৩/৫২) “হে নবী ! তুমি তোমাদের স্ত্রীদের বলো, তোমরা যদি পার্থিব জীবনের ভোগ বিলাসের কামনা করো, তবে এসো, আমি তোমাদের ভোগ বিলাসের ব্যবস্থা করে দিই, এবং সৌজন্যের সাথে তোমাদের বিদাই দিই ।” (সুরা আহজাব, ৩৩/২৮, আদি সুরা নং – ৯০ ) “হে নবী! আল্লাহ তোমার জন্য যা বৈধ করেছেন, তুমি তোমাদের স্ত্রীদের খুশী করার জন্য তা অবৈধ করছো কেন ? আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময় ।”(সুরা তাহরিম, ৬৬/১ ) “যখন নবী তার স্ত্রীদের একজনকে গোপনে কিছু বলেছিল, পরে তার সেই স্ত্রী তা অন্যকে বলে দিয়েছিল, এবং আল্লাহ্ নবীকে তা জানিয়ে দিয়েছিলেন । নবী এই বিষয়ে তার স্ত্রীকে কিছু বললো এবং কিছু বললো না, নবী যখন তা তাকে জানালো, তখন সে বললো, কে আপনাকে এ কথা জানিয়েছে ? নবী বললো, আমাকে জানিয়েছেন তিনি যিনি সর্বজ্ঞানী, সবই অবগত ।” (সুরা তাহরিম, ৬৬/৩ ) “তোমাদের দু জনের হৃদয় অন্যায়-প্রবণ হয়েছে, এখন যদি তোমরা অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ্র দিকে প্রত্যাবর্তন করো আল্লাহ্ তোমাদের ক্ষমা করবেন । কিন্তু তোমরা যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরের পোষকতা করো, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ ও জিব্রাইল এবং সৎকর্মশীল বিশ্বাসীগণ তার সাহায্যকারী ; উপরন্তু ফেরেস্তাগণও তার সাহায্যকারী হবে ।” ( সুরা তাহরিম, ৬৬/৪) “যদি নবী তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করে, তবে তার প্রতিপালক তোমাদের পরিবর্তে সম্ভবত তাকে তোমাদের অপেক্ষা উৎকৃষ্ট স্ত্রী দেবে, যারা হবে আত্মসমর্পণকারী, বিশ্বাসী, তওবাকারী, ইবাদতকারী, রোজা পালনকারী এবং বিধবা ও কুমারী ।” ( সুরা তাহরিম, ৬৬/৫) ।
কোরানে অসংখ্য আয়াত আছে যেগুলি কেবল মুহাম্মদের স্বার্থকেই রক্ষা করেছে । তিনি এমন বহু কাজ করেছেন যার ফলে ঘরে বাইরে তাঁর তীব্র সমালোচনা হয়েছে । তখন সে সব সমালোচনা বন্ধ করার জন্যে তিনি আল্লাহর কাছ থেকে ওহি (আয়াত) নিয়ে এসেছেন । কখনও আবার তিনি এমন কিছু অর্জন করতে চেয়েছেন যা তৎকালীন সমাজের প্রথাবিরুদ্ধ । তখন তিনি আল্লাহকে দিয়ে বলিয়েছেন যে, ঐ প্রথাটি আল্লাহ পছন্দ করে না । একটা উদাহরণ দেওয়া যাক । পালিত পুত্রকে আরবে আপন পুত্রের মত মর্যাদা দেওয়া হতো এবং পালক পালক পিতার উত্তরাধিকার দেওয়া হতো । পালক পুত্র তার স্ত্রীকে তালাক দিলে সেই তালাক প্রাপ্তা নারীর সঙ্গে পালক পিতার বিয়ে অবৈধ ছিলো । মুহাম্মদ এই দু’টো সুপ্রথাকে কুপ্রথা বলে বাতিল করেছিলেন আল্লাহর কাছ থেকে ওহি এনে । এটা করেছিলেন তিনি তাঁর পালক পুত্রের তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীকে বিয়ে করার জন্যে । এরূপ অনেক ওহি বা আয়াত আছে যা সম্পূর্ণ রূপেই মুহাম্মদের ব্যক্তিগত স্বার্থ পূরণ করেছে । ৩৩/৫০-৫২ নং আয়াত তিনটিও হলো সে রকম আয়াত যা কেবল মুহাম্মদের স্বার্থ রক্ষা করেছে।৬৬/১ নং আয়াতের তফসিরে যা লিখেছেন – “হজরত মধুর শরবত ভালবাসিতেন । একদা তাঁহার অন্যতম ভার্যা জয়নব কিঞ্চিত মধু সংগ্রহ করিয়া রাখিয়াছিলেন, হজরত যখন তাঁহার গৃহে উপস্থিত হইতেন তখন তিনি মধুপানা প্রস্তুত করিয়া দিতেন, তদনুরোধে তাঁহার আলয়ে হজরতকে কিছু অধিক বিলম্ব করিতে হইত । ইহা তাঁহার কোন কোন পত্নীর পক্ষে কষ্টকর হয় । তাঁহার সহধর্মিণী আয়শা ও হফসা পরামর্শ করিয়া স্থির করিলেন যে, হজরত যখন জয়নবের গৃহে মধুর শরবত পান করিয়া আমাদের কাহার নিকটে আগমন করিবেন তখন বলিব যে, তোমার মুখ হইতে মগফুরের গন্ধ নির্গত হইতেছে । মগফুর অরকত নামক বৃক্ষ বিশেষের নির্যাস, তাহা অতিশয় দুর্গন্ধ । হজরত সুগন্ধ ভালবাসিতেন, দুর্গন্ধকে অত্যন্ত ঘৃণা করিতেন । একদিন তিনি মধু পান করিয়া তাঁহাদের প্রত্যেকের নিকটে উপস্থিত হন। প্রত্যেকেই বলেন, “হজরত, আপনার মুখ দিয়া মগফুরের গন্ধ আসিতেছে ।” তিনি উত্তর করেন, “আমি মগফুর খাই নাই, জয়নবের আলয়ে মধুর শরবত পান করিয়াছি” । তাঁহারা বলিলেন, “হয় তো মধুমক্ষিকা অরকত কুসুম হইতে মধু সংগ্রহ করিয়াছিল” । ইহা পুনঃ পুনঃ বলা হইলে হজরত কহিলেন, “ঈশ্বরের শাপথ, আর কখনও উহা পান করিব না” । তাহাতে এই আয়াত অবতীর্ণ হয় ।” মুহাম্মদের ‘মধু পান না করার’ শপথটির নেপথ্যে যে ঘটনাটির কথা বলা হয়েছে তার সত্যতা মোটেই সংশয়াতীত নয় । এটা বানানো গল্প বলেই মনে হয় । কেননা, মুহাম্মদের স্ত্রীগন মুহাম্মদের মুখে মগফুরের দুর্গন্ধ পেলেন, অথচ জয়নব যখন মধুর শরবত প্রস্তত করেন তখন তিনি সে সেই দুর্গন্ধ পেলেন না, এবং মুহাম্মদও সেই সরবত পান করার সময় সেই দুর্গন্ধ পেলেন না, এটা বিশ্বাস করা কঠিন । এ ছাড়া আর একটা প্রশ্নের উদ্রেক হয় । এই অবিশ্বাস্য ঘটনাটিকে সত্যি বলে যদি স্বীকার করতে হয়, তবে এটাও স্বীকার করতে হয় যে, মুহাম্মদের স্ত্রীগণ ছিলেন অসৎ, মিথ্যেবাদী ও প্রতারক, এবং তাঁরা সকলে মিলে ষড়যন্ত্র করে মুহাম্মদের সঙ্গে প্রতারণা করেছিলেন । মুহাম্মদ স্বয়ং যাঁদের ‘উম্মুল মুমেনিন’ উপাধি দিয়ে নারী জাতির সর্বোচ্চ সম্মান প্রদান করেছিলেন তাঁরা কি তাঁর (মুহাম্মদের) সঙ্গে এতো বড়ো একটা হীন প্রতারণা ও জালিয়াতি করতে পারেন ? এটা বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন । মুহাম্মদ মধু খাওয়া ছেড়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন এ কথাটা অবিশ্বাসযোগ্য মনে হওয়ার আরও একটি কারণ আছে । অসামাজিক ও অন্যায় কাজ কিংবা অপরাধমূলক কাজ মানুষ গোপন করে । মধু খাওয়া ছেড়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করা তো কোনো খারাপ কাজ নয় । তাহলে এই অঙ্গীকারটি গোপন রাখতে হবে কেনো ? সুতরাং এটা প্রতীয়মান হয় যে, মধু খাওয়াকে অবৈধ করার অঙ্গীকার নয়, মুহাম্মদ অন্য কিছু অবৈধ করার অঙ্গীকার করেছিলেন । আর সেটা হলো মারিয়াকে তাঁর নিজের জন্যে অবৈধ করার অঙ্গীকার । কেনো এবং কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুহাম্মদ হাফসার নিকট মারিয়াকে বর্জন করা বা অবৈধ করার অঙ্গীকার করেছিলেন ? এই ঘটনাটি বিস্তারিত আলোচনা করেছি এই অধ্যায়েই ‘হাফসাকে তালাক’ প্রসঙ্গে লেখায় । এখানে তাই এ বিষয়টি শুধু ছুঁয়ে যেতে চাই । মারিয়া ছিলেন মিশরের সম্রাটের একজন দাসি । তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ সুন্দরী বালিকা । সম্রাট তাঁকে উপহার স্বরূপ পাঠিয়েছিলেন মুহাম্মদকে । মুহাম্মদ তাঁর রূপলাবণ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে তাঁর নিজের দাসী করে রাখেন এবং পরে তাঁর স্ত্রী হাফসার সেবায় নিযুক্ত করেন । অবশ্য এই বিষয়ে অন্য মত হলো মুহাম্মদ তাঁকে উপপত্নী করে তাঁর হেফাজতে রেখে দেন । মুহাম্মদ তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে পালা করে থাকতেন । প্রত্যেক স্ত্রীর জন্যে তিনি আলাদা আলাদা ঘর তৈরী করে দিয়েছিলেন । হাফসার পালার দিনে একদিন সন্ধ্যা নাগাদ তিনি হাফসার ঘরে যান । গিয়ে দেখেন ঘরে হাফসা নেই, তিনি তাঁর পিতৃগৃহে বিশেষ কাজে গেছেন । হাফসার অনুপস্থিতিতে তাঁর ঘরে তিনি মারিয়াকে ডেকে নিয়ে তাঁর সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হয়ে যান । ইত্যবসরে হাফসা তাঁর ঘরে ফিরে আসেন । তখনও মুহাম্মদ ও মারিয়া রতিক্রিয়ায় মগ্ন ছিলেন । সে সময়েই হাফসা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেন এবং তাঁদের দেখে ফেলেন । নিজের ঘরে নিজের বিছানায় নিজের পালার দিনেই মুহাম্মদ ও মারিয়াকে সঙ্গমরত অবস্থায় দেখে তিনি ভীষণ ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে তীব্র ভর্ৎসনা করতে শুরু করেন । মুহাম্মদ তখন তাঁর ভুল হয়েছে বলে হাফসার কাছে ক্ষমা মার্জনা করেন এবং জীবনে আর কোনদিন মারিয়াকে স্পর্শ না করার অঙ্গীকার করেন । হাফসার তখন ক্রোধ প্রশমিত হয় এবং শান্ত হয় । মুহাম্মদ তখন হাফসার নিকট থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেন যে সে এই ঘটনাটি গোপন রাখবে এবং কারো কাছে কোনদিন ব্যক্ত করবে না । ৬৬/৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে মুহাম্মদ তাঁর একজন স্ত্রীকে একটা কথা গোপনে বলেছিলেন, কিন্তু তাঁর সেই স্ত্রী কথাটা অন্য স্ত্রীকে বলে দিয়েছিলেন । সেই গোপন কথাটা হলো মারিয়ার সঙ্গে সঙ্গম করতে গিয়ে ধরা পড়ে যাওয়া এবং তারই শাস্তি স্বরূপ হাফসার নিকট মারিয়াকে আর কোনদিন স্পর্শ না করার অঙ্গিকার করার কথা ।মুহাম্মদের এই কুৎসিত মারিয়াকাণ্ডটি গোপন করার জন্যে জয়নবের ঘরে মধুর শরবত খাওয়ার গল্পটি বানানো হয়েছে । তবে কোরানের তফসিরকাররা মারিয়াকাণ্ডটি সম্পূর্ণ নস্যাতও করেন নি । আগেই বলেছি যে, তাঁরা দুটো ঘটনাকেই তফসিরে উল্লেখ করেছেন এবং এটাও স্বীকার করেছেন যে মারিয়াকাণ্ডটাই অধিক প্রসিদ্ধ ।
মরুডাকাত মুহাম্মদের দাম্পত্য জীবনে ব্যার্থতা, কলহ ও অশান্তির জন্যে তাঁর স্ত্রীদের দোষ দেওয়া যায় না । এর জন্যে দায়ী মুহাম্মদ স্বয়ং । অথচ সেই কলহ ও অশান্তি দমনে যখন কোনো ভাবেই সফলতা পান নি, তখন তিনি তালাককে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন । তাঁর স্ত্রীরা বিশ্বাস করতেন যে তাঁরা যদি তাঁর (মুহাম্মদের) স্ত্রী হিসেবে মৃত্যুলাভ করেন তা হলে তাঁরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচবেন এবং বেহেস্তে লাভ করবেন । তাই তাঁরা মুহাম্মদের কাছে নয়, তালাকের কাছে আত্মসমর্পণ করতেন । যখন মুখে তালাকের ভয় দেখিয়ে কাজ হয় নি, তখন সত্যি সত্যিই তালাক দিয়েছেন যদিও পরে তা ফিরিয়ে নিয়েছেন ।