মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে ভয় আর লোভ। ধর্মে এই দুটোই বিদ্যমান রয়েছে। যার ফলে পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ লোভ এবং শাস্তির ভয়ে ধর্মে বিশ্বাস করে থাকে।
আপনাকে যদি কেউ মাথায় ঠেকিয়ে পিস্তল ভয় দেখিয়ে কোন কাজ করতে বলে আপনি বাধ্য হয়ে হয়তো তাই করবেন, ঠিক একইভাবে কেউ যদি আপনাকে ১হাজার কোটি টাকার লোভ দেখিয়ে কোন কাজ করতে বলে আপনি হয়তো লোভে পড়ে তাই করতে চেষ্টা করবেন কিংবা আপনি যদি ১০০টা খুন ধর্ষণ করেও কোন বিচারকের পায়ে ধরে অপরাধের ক্ষমা পান তাহলে হয়তো অবশ্যই আপনি তা করবেন নিজেকে বাঁচানোর জন্য । ধর্ম গুলো ঠিক একই পন্থা অবলম্বন করেছে। ক্ষমা, লোভ, ভয় দেখিয়ে মানুষকে পরজীবনে আশ্বস্ত করেছে। যার ফলে ধর্ম প্রর্বতকগণ হাজার বছর আগেই অজ্ঞ, অনৈতিক, লোভী, ভীতু, বোকা মানুষের মানসিক দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে চতুরতার সঙ্গে ধর্ম বিশ্বাস, কল্পিত ইশ্বরের ধারনা ঢুকিয়ে দিয়েছেন। প্রাচীনকালে মানুষের নির্ভর করতে হতো পুরোপুরি প্রকৃতির ওপর, তখন অনেক কিছুই তাদের সক্ষমতার ভিতরে ছিল না।
তাদের তখন বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হতো, খাদ্যশস্য উৎপাদনের নির্ভরতা ছিল প্রকৃতি ওপর। রোগব্যাধি নিরাময়ের তেমন সক্ষমতা ছিল না। বিজ্ঞানের প্রসার ঘটেনি পুরোপুরি তখনও। যার ফলে তখন মানুষ প্রাকৃতিক দূর্যোগে, রোগে আক্রান্ত হয়ে হতাশায় পড়ে যেত, কেননা এসব সমস্যা সমাধানের কোন পথ জানা ছিল না তাদের ।
যার ফলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই তারা অলৌকিক কোন শক্তির সাহায্যে কামনা করতো। আর এভাবেই বোকা, অজ্ঞ মানুষদের মানসিক দূর্বলতার ফলেই ইশ্বরের আর্বিভাব হয়। সব যুগেই কিছু চতুর ধুরন্ধর মানুষ ছিলেন আর তাঁরাই হলেন বিভিন্ন ধর্মের প্রর্বতক। সমাজের দুঃখ দুর্দশা, ক্ষুধা , দারিদ্রতা, হতাশায়, প্রাকৃতিক দূর্যোগে, বিশৃঙ্খলায় যখন তখনকার সমাজ ব্যবস্থা জর্জরিত ছিল ঠিক তখনই চতুর ব্যাক্তিগণ তাদের সমস্যার সমাধানের এক যুগান্তকারী জিনিস আবিষ্কার করলেন। তারা আবিষ্কার করলেন কল্পিত ইশ্বর, ভগবান, আল্লাহ, নানা ধরনের দেব দেবী। তারা সেসব ইশ্বরের দূত দাবী করলেন নিজেদের, ক্ষমতা আধিপত্য আর ভূখন্ড লাভের আশায়। ইশ্বরের নাম ভাঙিয়ে সমাজে তৈরি করলেন ভেদাভেদ, ঘৃনা, চালালেন শোষণ নিপীড়ন! তৈরি করলেন নিজেদের মতো করে বিভিন্ন ধর্ম।
ইশ্বরের দূত দাবীকারী নবী রাসূলগন সমাজের অজ্ঞ, লোভী, ভীতু, অসৎ মানুষদের বোঝালেন তোমাদের সকল সমস্যার সমাধান করবে ইশ্বরগণ, আর ইশ্বরগণই এসব ধর্ম তোমাদের দিয়েছেন। তোমরা ইশ্বরের কথা মানলে পরজীবনে পাবে অফুরন্ত সুখ আর না মানলে কঠিন শাস্তি। ইশ্বর তোমাদের সকল অন্যায় ভুল ক্ষমা করে দিবেন। লোভ আর ভয়ে ধর্ম প্রর্বতকদের দ্বারা মানুষ এভাবেই প্রভাবিত হলো। আস্তে আস্তে ধর্ম হয়ে উঠলো সবার মাঝে জনপ্রিয়।
কিন্তু বর্তমান এই আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে কেউই ইশ্বরের ওপর নির্ভরশীল নন, তারা সবাই নির্ভরশীল পুরোপুরি বিজ্ঞানের ওপর। যার ফলে এখন কারো অসুখ হলে সেটাকে বলা হয় না জীন ভূতের বাতাস, রোগ ব্যাধি মুক্তির জন্য এখন কেউই ধর্মীয় বিশ্বাস মেনে ঝাড়ফুঁক দেয় না, সবাই বিজ্ঞানের তৈরি ঔষুধ ব্যবহার করে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ কোন ইশ্বরের অভিপাশ নয়, এটা প্রকৃতি ধ্বংসের ফলেই হচ্ছে তা আমরা আবিষ্কার করতে পেরেছি। বিজ্ঞান যেদিন থেকে এসেছে সেদিন থেকেই ইশ্বরগণ আস্তে আস্তে মারা যাচ্ছে , আধুনিক এই বিজ্ঞানের যুগে নতুন করে এখন পর্যন্ত কোন ইশ্বর আসার সাহস দেখায়নি, কিন্তু কেন?
কেননা ইশ্বর মানেই ভুয়া, ঠকবাজি মিথ্যার ছাড়াছাড়ি! এখনকার যুগে ইশ্বর তথা নবী রাসূলগণ আসলেই মানুষ গণপিটুনি দেয়! কেননা মানুষ বুঝে গেছে আদৌ এসব বাস্তবিক ক্ষেত্রে সম্ভব নয়, ধার্মিকগন নিজেরাও জানে যে আধুনিক যুগে এসব নবী ইশ্বরগণ দাবি মাত্র। তারা নিজেরাও কথিত ইশ্বরের ওপর আস্থা রাখতে পারে না বিপদে পড়লে তারা দৌড়ে পীর ফকির দরবেশ ইশ্বরের কাছে যায় না। তারা সহায়তায় জন্য যায় পুলিশের কাছে, আইনজীবীর কাছে, অসুস্থ হলে মসজিদ না গিয়ে হাসপাতালে যায়।
আজ থেকে ৩০ বা ৪০ বছর পূর্বেও কৃষকরা খড়ার মৌসুমে ফসল আবাদের জন্য বৃষ্টির জন্য ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতো। কিন্তু বর্তমানে সময়ে এসে কোন কৃষক বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে না, আবাদের জন্য যদি কোন কৃষক বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে বিজ্ঞানের সেচ ব্যবস্থা বাদ দিয়ে! ধার্মিকরাও সে কৃষককে পাগল ভাববে, কৃষকরা যদি ফসল লাগিয়ে সার বিষ না দিয়ে শুধু ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে অধিক ফসলের জন্য। তাহলে ধার্মিকগন ঠিকই সেই কৃষক পাগল বলবে। তারমানে এটা প্রমানিত যে বিজ্ঞানের কাছে ইশ্বর বড় অসহায়, ইশ্বরের শক্তি নেই, ইশ্বর একটা অজ্ঞতা কল্পনার নাম। আজ থেকে ৫০০ বছর পরে হয়তো ইশ্বর নাম শুনলে লোকে হাসবে।