২০১৫-১৬ সালের সরকারি পরিসংখ্যান মোতাবেক বাংলাদেশে রয়েছে এক লাখ দুই হাজারের মতো যৌনকর্মী। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে নারী যৌনকর্মীর মোট সংখ্যা প্রায় পাঁচ লক্ষ বলেও ধারণা করা হয়।আমরা জানি খাদ্যের ক্ষুধা দেহের একটা অত্যাবশ্যকীয় চাহিদা, চিকিৎসাও দেহের একটা দাবী। সেসব নিয়ে যদি ব্যবসা করা যায়, সমাজকর্ম করে সমাজকর্মী নাম নেয়া যায়, তবে কেন যৌনকর্মীদের সোশালওয়ার্কার ঘোষণা করা হবে না। যৌনতাও তো দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা। এই যুক্তি খন্ডন করা বেশ কঠিন।
বাংলাদেশের মতো একটা দেশে রাতারাতি পাশ্চাত্য উদারনৈতিক মানবিকতা এসে যাবে এটা কেউ আশা করে না। কিন্তু চাপিয়ে দেয়া উটকো অনাচার অত্যাচার থেকে মানুষ কিছুটা অব্যাহতি তো পেতে পারে। যৌননির্যাতনকে ইভটিজিং অথবা বয়সের দোষ নাম দিয়ে ধর্ষণকে লঘু করে দেখা, দেশের অর্ধেক সক্রিয় জনশক্তিকে বস্তায় ভরে মুসলিম মৌলবাদী জনতা সাজার তেতুলতত্ত্ব ও লালাবাদী সহ নানান ভণ্ডানুভূতি থেকে নিষ্কৃতির আশা তো দেশের মানুষ করতে পারে।কার কাছে সেই আশাটা মানুষ করবে? নিশ্চয়ই সেই রাজনীতির কাছে।সুতারং রাজনীতিতে সবকিছুর জন্যে স্পেস রাখতে হবে, রাখতে হবে যৌনতার জন্যেও।
মানুষের যৌন-স্বাধীনতা ও প্রজননের স্বাধীনতা নিহিত তার স্বাভাবিক যৌনচেতনার ভিতরে। যে রাষ্ট্র যতবেশী এই চেতনার পৃষ্ঠপোষক তারা ততোবেশী মানবিক ও আধুনিক। রাষ্ট্রের এই চাওয়াকে অনুসরণ করে তার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।কাম প্রথম রিপুর মর্যাদা পেয়েছে তার নিজস্ব ধারে ও ভারে, বিক্ষিপ্তভাবে নয়। আমাদের সব কাজের গোঁড়ায় মূল অণুপ্রেরণাদায়ী শক্তি কাম। ইয়ং, ফ্রয়েড থেকে শুরু করে জেফ্রি মিলার সবাই এক সাথে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন দিনশেষে। আমরা রেগে গেলে চেতনাভ্রষ্ট হয়ে কাম তথা যৌনতা মিশিয়ে গালাগাল ছুড়ে মারি।
যে জিনিস আমাদের অস্তিত্বের সাথে, জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি যা আমাদের ছায়াসঙ্গী হিসাবে দেহ-মনে মিশে থাকে, তা গালি হয়ে গেল কেমন করে। যৌনতা বিষয়ে অজ্ঞতা মানুষকে ঠিক মানায় না। আমরা কালার ম্যাচ করে কাপড় পরতে ভালবাসি, কিন্তু ভিতরের বুদ্ধিবৃত্তিক পোশাকটা ম্যাচ করে পরি না।খেয়াল করলে দেখা যায় অনেকের ভিজুয়াল চরিত্র ও যৌন চরিত্রের মাঝে বিস্তর ফারাক আছে। দুটি যেন দুই ব্যক্তিত্বে প্রতিয়মান হয়। কেউ মহিলা, কেউ পুরুষ, কেউ বা বাই, কেউ বৃদ্ধ, কেউ শিশু, কেউ বা অন্য প্রাণীকেও কামনা করে থাকে। যৌনতাকে কেউ ফ্যান্টাসাইজ করে, কেউ অ্যাগ্রেসিভ হতে চায়। কেউ ডমিনেটিং কেউ ডমিনেটেড! অথচ এদের অনেকেই ভিজুয়াল চরিত্রে সুপারহিরো। সাইকোসেক্সুয়ালিটি সত্যই বড় রহস্যের। এদের ডাবল পার্সোনালিটি সমান্তরালে চলতে থাকে।
পরিশেষে বলবো যৌনতা যে প্রত্যেক মানুষের লাইফের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং মৌলিক চাহিদা এবং এটা ছাড়া যে মানুষ ভালোভাবে বাঁচতে পারেনা, তা বোঝেনা বাঙালি সমাজ, তাছাড়া বাঙালি সমাজের ওপর সহবাস করার সুন্নত পদ্ধতি সহ চেপে আছে ভন্ড মুহাম্মদের তৈরি করা নানা অবদমনমূলক-পীড়নমূলক-পুরুষধিপত্যবাদীমূলক-মানসিক কষ্টদায়ক বিভিন্ন আইন-কানুন, সেই সপ্তম শতাব্দীতে প্রণয়ন করা যে বিধি-নিষেধগুলো, যে শেকলগুলো আমাদেরকে আশ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে তা মুছে ফেলার জন্য সত্যিকারের প্রগতিবাদী-মানববাদী-নারী-পুরুষ সমাধিকারবাদী শিক্ষা বাংলার সমাজে চালু করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, তার সাথে সাথে আওয়াজ তুলতে হবে বাংলাদেশে যৌনকর্মীদের সমাজকর্মী বা সোশাল-ওয়ার্কার ঘোষণা করা হোক।তাদের নিয়মিত ভাতা প্রদান করা হোক।যৌনকর্মীদের প্রতি সামাজিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার লক্ষে তাদের মানুষ হিসেবে নাগরিক অধিকার চর্চা ও পেশাকে স্বীকৃতি দিতে হবে।