কুরআন হাদিস বনাম ধর্মব্যবসা ও হুজুরদের ভন্ডামি

দ্বীন প্রচারের বিনিময়ে টাকা বা পার্থিব কিছু নেয়া সম্পূর্ণ হারাম। ধর্মের কোনো পার্থিব বিনিময় চলে না – এটা মনে রাখতে হবে। কেননা, তার প্রতিদান পরকালে রয়েছে। – এগুলো আমার মত নয়, বরং কুরআন হাদিসের কথা এবং ইসলাম কোন ইসলাম কোন হুজুর বা ধর্মগুরুদের কথায় চলে না বরং কুরআন হাদিস দিয়েই চলে।

আল্লাহ বলছেন শুয়োর খাওয়া হারাম, মৃত জন্তু খাওয়া হারাম, তারপর বলছেন নিরুপায় হলে তাও খেতে পারো (সুরা বাকারা ১৭৩)। কিন্তু ধর্মের বিনিময় নেয়া একেবারে হারাম যার কোনো ক্ষমা নেই।

কুরআনের হাদিসের অনেকেগুলো রেফারেন্স নিচে আছে :

এখন কিছু মানুষ ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে বলে যে টাকা না নিলে হুজুররা চলবে কিভাবে?

আচ্ছা, তারা কি বিশ্বাস করে না যে রিজিকের মালিক আল্লাহ এবং জন্মের পূর্বেই রিজিক লিখা হয়ে গেছে? এখন কথা হলো এটা কি আল্লাহ তো জানতো না? তারা আল্লাহর উপর আল্লাহগীরী করে? ধর্মশিক্ষা বা প্রচারের বিনিময়ে টাকা না নিলে যদি চলতে না পারতো তবে সেটাতো আল্লাহই কুরআনে বলে দিতেন।

এখন আসুন, যুগে যুগে নবীরা কিভাবে চলতো?

নবীজি এবং তার সাহাবিদের ক্ষমতায় যাওয়ার পূর্বে এতোগুলো বছর কিভাবে চলেছিলো? তখন তো তাদের অবস্থা আরও করুন ছিলো। এমনকি দরিদ্র সাহাবীরা না খেয়ে থাকতো।কিন্তু তারা ধর্ম প্রচারের বিনিময়ে টাকা নেয় নি। সেই যুগে তারা হুজুরদের চেয়েও বেশি ধর্ম প্রচার করেও যেহেতু চলতে পারতো, তাহলে হুজুররা কেন চলতে পারবে না? ধর্মকে কেন তারা পেশা হিসেবে নিবে? কুরআন তো কখনো এটা বলেনি। উল্টো এটার বিরোধিতা করেছেন? ওসব হুজুররা কি আল্লাহর চেয়ে বেশি বুঝেন? কুরআনে আল্লাহ রিজিক তালাশ করতে কাজ করার কথা বলেছে কিন্তু ধর্ম প্রচার করে টাকা নেয়ার কথা বলেনি। তাহলে হুজুরা কুরআন আয়াত অনুযায়ী কাজের মাধ্যমেই তো রিজিক তালাশ করতে পারে এবং ধর্ম প্রচারের সময় ধর্ম প্রচার করবে। এমনকি কাজ বা ব্যবসায় মধ্যেও ধর্ম প্রচার করা যায়৷

এখন যারা স্পষ্ট বিনিময়কে বলেবে, হাদিয়া বা খুশি করে দেয়া হয় বলবে তাদের বলবো, ঘুষকেও তো খুশি করে / চা নাস্তার পানি বলে দেয়া হয়, তাই বলে কি ঘুষ জায়েজ হয়ে যাবে? মদকে যদি আপনি দুধের বোতলে ঢুকান তাহলে মদতো আর দুধ হয়ে যায় না।

কোনটি হাদিয়া আর কোনটি বিনিময় সে ব্যাপারে এই হাদিসে আরও স্পষ্ট করা হয়েছে –

[সহিহ মুসলিম ও বুখারির রেওয়াতে একটি হাদিস রয়েছে, আবু হুমাইদ আস সাইদি বর্ণিত, তিনি বলেন, আসাদ গোত্রের ইবন লুতবিয়া নামক জনৈক ব্যক্তিকে রাসুল সা. সুলাইম গোত্রের যাকাত উসুল করার কাজে পাঠান। যখন সে ফিরে আসলো সে বলল, ‘’ এগুলো জাকাতের সম্পদ আর আর অন্যগুলো আমাকে হাদিয়া হিসেবে দেয়া হয়েছে।

তৎক্ষণাৎ মুহাম্মাদ সা. মিম্বারে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্‌র শোকরিয়া আদায় করলেন, তারপর রাসুল সা. বললেন, “ তার ব্যাপারে কি বলব, যাকে আমি যাকাত উসুল করার কাজে পাঠালাম আর সে এসে বলছে ‘এগুলো জাকাতের সম্পদ আর অন্যগুলো আমাকে উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে ?’’ সে কেন নিজ গৃহে অবস্থান করে দেখে না সে একই উপহার পেত কিনা যদি সে উসুল এর কাজে না যেত?]

শেষের কথাটি লক্ষ্য করুন যে ওয়াজী বা ধর্ম প্রচারকারীরা যদি ওই কাজ না করে বাসায় বসে থাকতো তবে কি তথাকথিত হাদিয়া তাদের দেয়া হতো?

হতো না। সুতরাং এটা স্পষ্ট বিনিময়, হাদিয়া নয়।

সুরা বাকারার ১৭৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেন, “আল্লাহ যে কেতাব অবতীর্ণ করেছেন যারা তা গোপন করে এবং বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে তারা (১) নিজেদের পেটে আগুন ছাড়া কিছুই পুরে না, (২) কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, (৩) আল্লাহ তাদের পবিত্রও করবেন না, (৪) তারা ক্ষমার পরিবর্তে শাস্তি ক্রয় করেছে, (৫) তারা হেদায়াতের পরিবর্তে পথভ্রষ্টতা বা গোমরাহী ক্রয় করেছে, (৬) তারা দীন সম্পর্কে ঘোরতর মতভেদে লিপ্ত আছে (৭) আগুন সহ্য করতে তারা কতই না ধৈর্যশীল”।

আর আল্লাহর রসুল বলেছেন, আমার উম্মাহর আলেমরা হবে আসমানের নিচে নিকৃষ্টতম জীব, তাদের থেকে উদ্ভূত ফেতনা তাদের দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে (আলী রা. থেকে বায়হাকী)।

সুতরাং যারা এসকল ধর্মব্যবসায়ীদের অনুসরণ করবে তারাও জাহান্নামেই যাবে। পূর্ববর্তী সকল নবী রসুলগণ তার কওম বা জাতিকে কালেমা বা আল্লাহর তওহীদ বা আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে মেনে নেয়ার প্রতি আহ্বান করেন এবং এর কোন বিনিময় গ্রহণ করার প্রতি কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন: “তোমরা তাদের অনুসরণ করো যারা কোনো বিনিময় কামনা বা গ্রহণ করে না। (সুরা ইয়াসীন ২১)”।

১। নূহ (আ.) এর ঘোষণা: হে আমার সম্প্রদায়! এর পরিবর্তে আমি তোমাদের নিকট ধন সম্পদ চাই না। আমার পারিশ্রমিক আল্লাহর নিকট। [সুরা হুদ-২৯, সুরা শুআরা – ১০৯, সুরা ইউনুস – ৭২]

২। হুদের (আ.) ঘোষণা: হে আমার সম্প্রদায়! আমি এর পরিবর্তে তোমাদের নিকট কোনো মজুরি চাই না। আমার পারিশ্রমিক তাঁরই নিকট যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কি তবুও বুঝতে চেষ্টা করবে না? [হুদ-৫১, সুরা শু’আরা – ১২৭]

৩। সালেহ (আ.) এর ঘোষণা: আমি তোমাদের নিকট এর জন্য কোনো পারিশ্রমিক চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। [সুরা শু’আরা-১৪৫]

৪। লুতের (আ.) ঘোষণা: এর জন্য আমি কোনো মজুরি চাইনা। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। [সুরা শু’আরা-১৬৪]

৫। শোয়েবের (আ.) ঘোষণা: আমি এর জন্য তোমাদের নিকট কোনো মূল্য চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। [সুরা শু’আরা-১৮০]

নবীজির প্রতি আল্লাহর হুকুম :

ক. বল! আমি এর জন্য তোমাদের নিকট কোনো পারিশ্রমিক চাই না। এবং যারা মিথ্যা দাবি করে আমি তাদের দলভুক্ত নই। [সুরা সাদ – ৮৬]

খ. তাদেরকেই (নবীদেরকেই) আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন। সুতরাং তুমি তাদের পথ অনুসরণ কর; বল! এর জন্য আমি তোমাদের কাছে কোনো মজুরি চাই না। [সুরা আনআম – ৯০]

এমন আরও বহু আয়াত এবং হাদীস উল্লেখ করা যায় যা থেকে প্রমাণিত হয়, দীনের কোনো কাজ করে অর্থ উপার্জন করা সম্পূর্ণ হারাম।

  • Forhad H Fahad

    Related Posts

    রুমডেট পর্ব -১

    প্রেম হওয়ার ৬ মাসের মাথায় প্রথমবারের মতো রুমডেটিংয়ে এসে আরিফ এবং ফারহানা পরস্পরকে খুব নিবিড়বন্ধনে জড়িয়ে শুয়ে আছে। বাইরে বৃষ্টি। মাঝেমধ্যে বজ্রপাতের শিহরণ। আরিফ তার খোলা বুক দিয়ে অনুভব করছে ফারহানার হৃদয়কম্পন। এমন সময় আরিফ ফারহানাকে জিজ্ঞেস করে : জান, তুমি কী দেখে আমাকে এত ভালোবাসলে? আমার মধ্যে কীএমন পেয়েছ? ফারহানা ফিসফিস করে উত্তর দেয় : ‘সোনাপাখী তোমার মধ্যে আমি যা পেয়েছি তা হলো—উত্তম চরিত্র। তুমি পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ো।…

    Read more

    হজ্জ ও বিবিধ প্রসঙ্গ

    “মক্কা গিয়ে হজ্জ করিয়ে খরচ করলি যে টাকা সে টাকা গরীবকে দিলে গরীব আর থাকে কেডা,তর ঘরের ধন খা পরে পরে দেশের লোক না খাইয়া মরে সত্যি কথা কথা বললে পরে দেশে থাকতে দিবি না।”  মাতাল রাজ্জাক! প্রত্যেক ধনবান নারী পুরুষের জন্য একবার হজ্জে যাওয়া ফরজ। এখানে ধনবান শব্দটা দিয়ে এটাই নির্দেশ করে যে কিছু মানুষের সামর্থ্য থাকবে না, অর্থাৎ, দুনিয়া নামক পরীক্ষার হলে তিনিই বৈষম্যটা শুরু করেছেন। হজ্জ…

    Read more

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Latest

    আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কি হিন্দু শাক্তদেবী মা-কালীকে উদ্দেশ্য করে লেখা?

    আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কি হিন্দু শাক্তদেবী মা-কালীকে উদ্দেশ্য করে লেখা?

    একেই কি বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

    একেই কি বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

    কর্ণচিকিৎসা

    কর্ণচিকিৎসা

    তাকদীর বিষয়ক রেফারেন্স

    তাকদীর বিষয়ক রেফারেন্স
    কুদরত

    পরকাল নিয়ে মুমিনদের বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্নের জবাব

    পরকাল নিয়ে মুমিনদের বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্নের জবাব